আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ২০২৪

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

যুক্তরাষ্ট্রের “আমেরিকার ড্রিম” বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি বিষয়। উন্নত কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা  ইত্যাদি কারনে সারা পৃথিবীর মানুষের স্বপ্নের গন্তব্য আমেরিকা। তাই আমাদের দেশের মানুষজনও “আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা” সম্পর্কে জানতে চান। প্রতি বচর আমাদের দেশ থেকে অনেক মানুষ এই স্বপ্নের দেশ গমন করনে। যদিও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, তবুও মার্কিন দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৩,৫৬৩ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যয়ন করতে গেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৮% বেশি। এছাড়াও কাজের খাতিরে , ভ্রমন ও বিজনেসের জন্য আরও মানুষ আমেরিকায় ভ্রমন করেন। তাই আপনিও যদি আমিরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

 

আমেরিকার ভিসা নীতি 

আমেরিকার ভিসা নীতি অনেক জটিল এবং নির্ভর করে ভিসার ধরণ, ভ্রমণের উদ্দেশ্য, এবং আবেদনকারীর জাতীয়তার উপর। বিশেষত বাংলাদেশিদের ভিসা পেতে অনেক কঠিন পথ পারি দিতে হয়। তবে, মূল বিষয়গুলো বুঝে আবেদন করলে, ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমেরিকার দুই ধরণের ভিসা আছে: স্থায়ীভাবে থাকার জন্য রেসিডেন্ট ভিসা, এবং পর্যটন, ব্যবসা, শিক্ষা, বা চিকিৎসার মতো অস্থায়ী সফরের জন্য নন-রেসিডেন্ট  ভিসা। এইসব ভিসা পাবার বিস্তারিত যোগ্যতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।  

 

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ২০২৪

আমারা আগেই জেনেছি, আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তগুলি অনেক কঠিন ও জটিল হয়ে থাকে। এটি নির্ভর করে আপনি কি ধরনের ভিসা আবেদন করছেন, কেন ভ্রমন করবেন, আপনার আর্থিক অবস্থা ও আরও অনেক কিছু বিষয়ের উপর। তাই ভিসার ধরন অনুসারে যোগ্যাতা দেওয়া সমুহের বিস্তারিত আলোচনা করা হল। 

দীর্ঘকালিন, B1/B2 ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার দীর্ঘকালীন B1/B2 ভিসা সাধারণত ব্যবসা, পর্যটন, বা চিকিৎসার জন্য প্রদান করা হয়। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি একাধিকবার আমেরিকা ভ্রমন করতে পারবেন, তবে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবেন না। এই ভিসার পাবার যোগ্যতা সমূহঃ 

  • আপনার যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে, 
  • আপনাকে প্রমান করতে হবে যে, বাংলাদেশে আপনার শক্তিশালী স্থায়ী সম্পর্ক (যেমন, চাকরি, পরিবার) আছে, তাই আপনি ফিরে আসবেন।  
  • কোন প্রকার অপরাধমূলক ইতিহাস থাকা যাবে না। 
  • ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করতে হবে। 
  • পূর্ববর্তী ভিসা লঙ্ঘনের ইতিহাস থাকা যাবে না।
  • প্রয়জনিয় নথিপত্র প্রদান করতে হবে। 

মনে রাখবেন,সব শর্ত পূরণ করা সত্তেও আপনি দীর্ঘমেয়াদী B1/B2 ভিসা পাবেন তার নিশ্চিতা নেই, এবং কখনও কখনও ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ জানানো হয় না। তাই আবেদনের আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। 

 

শিক্ষার জন্য, F1 ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য F1 ভিসা অপরিহার্য।  এই ভিসা পেতে হলে আপনার নিম্নলিখিত যোগ্যতা সমূহ থাকতে হবে:

১. একটি স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি: আপনাকে অবশ্যই আমেরিকার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ-সময়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হতে হবে। ভর্তির প্রমাণ হিসাবে (Acceptance Letter) জমা দিতে হবে।

২. পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য দেখানো: আপনার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া, এবং অন্যান্য খরচ বহন করার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য আছে, তা প্রমান করতে হবে। আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণের জন্য (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পন্সরশিপ চিঠি ইত্যাদি) জমা দিতে হবে।

৩. শিক্ষার উদ্দেশ্য: আপনাকে অবশ্যই আমেরিকায় শিক্ষা গ্রহণের স্পষ্ট কারন ও উদ্দেশ্য প্রমান করতে হবে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।

৪. ইংরেজি ভাষার দক্ষতা: আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগ করার মত পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাই TOEFL, IELTS, PTE ইত্যাদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অথবা নুন্নতম স্কোর অর্জন করতে হবে।

৫. সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ: আপনাকে মার্কিন দূতাবাসে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং পাস করতে হবে।  সাক্ষাৎকারে আপনার শিক্ষার উদ্দেশ্য, আর্থিক সামর্থ্য, এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • F1 ভিসা ৫ বছরের জন্য বৈধ, এবং প্রতি বছর আপনাকে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ-সময়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত থাকতে হবে।
  • F1 ভিসাধারীরা সপ্তাহে ২০ ঘন্টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কাজ করার অনুমতি পায়।
  • স্নাতক শেষ করার পরে, আপনার আরও ১ বছরের Optional Practical Training (OPT) করার সুযোগ থাকে।

 

“আরো পড়ুন”

পর্তুগাল কাজের ভিসা অনলাইনে আবেদন করুন 2024

চাকরির জন্য, H1B/L1 ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকায় চাকরির জন্য দুটি প্রধান ভিসা ক্যাটাগরি হল H1B এবং L1 ভিসা । H1B ভিসা মূলত দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য, যেমন বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, বা শিক্ষক। সাধারণত, এই ভিসার জন্য প্রয়োজন হল, স্নাতক ডিগ্রি এবং একটি মার্কিন কোম্পানির স্পনসরশিপ।  এছাড়াও, আমেরিকার শ্রম বিভাগের অনুমোদন লাগে। H1B ভিসাটি ৬ বছরের জন্য বৈধ,  এবং পরবর্তীতে ৩ বছরের এক্সটেনশনের সম্ভাবনা আছে। 

অন্যদিকে, L1 ভিসাটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদের জন্য, যারা আমেরিকার কোন কোম্পানির অন্য দেশের শাখায় কাজ করেন কিন্তু এখন আমেরিকায় কোম্পানির মুল অফিসে স্থানান্তরিত হতে চান। এ ক্ষেত্রে, কোম্পানির বাইরের মার্কিন অফিসে কমপক্ষে এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা এবং নির্দিষ্ট পেশাগত দক্ষতা থাকা আবশ্যক। L1 ভিসা ৫ বছরের জন্য বৈধ, এবং ভবিষ্যতে আরও ২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়।

এটা মনে রাখতে হবে যে, H1B এবং L1 ভিসাধারীরা স্পনসর কোম্পানির বাইরে কোথাও কাজ করতে পারেন না। তবে H1B ভিসাধারীরা, নির্দিষ্ট ভিসা (H4) এর মাধ্যমে স্বামী/স্ত্রী এবং নির্ভরশীল সন্তানদের সঙ্গে আনতে পারবেন।

 

বৈজ্ঞানিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি (STEM) ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আপনি যদি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক কিনবা প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ হন, তাহলে আপনার জন্য সুখবর। কেননা, বৈজ্ঞানিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি (STEM) ক্ষেত্রে দক্ষ মানুষদের জন্য আমেরিকায় ভিসা পাবার অনেক সুযোগ রয়েছে।  এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল H1B ভিসা, যা STEM ডিগ্রিধারী (বা সমমানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন) এবং বিশেষ দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া হয়। তবে, H1B ভিসা পেতে হলে আপনার একটি মার্কিন কোম্পানির স্পনসরশিপ লাগবে। এই ভিসা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

 

কৃষি কর্মজীবনের জন্য, H-2A ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

কৃষি খাতে মৌসুমি চাহিদা মেটাতে বিদেশী শ্রমিকদের নিয়োগের জন্য আমেরিকা সরকার H-2A ভিসা প্রদান করে থাকে। এই অস্থায়ী ভিসা পেতে হলে,  আপনার মার্কিন কোন প্রতিষ্ঠানের বা বাক্তির স্পনসরশিপ (কাজের প্রস্তাব) লাগবে।  কর্মসংথানকারীকে কাজের বিবরণ (ধরণ, সময়, বেতন) সহ  উল্লেখ করে U.S. Department of Labor (DOL) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এই ভিসা পাবার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে মৌলিক ইংরেজি বা স্প্যানিশ জানা জরুরি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও করোনা টিকা নিতে হবে।  এছাড়াও, বৈধ পাসপোর্ট, অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকা, এবং আবেদন ফি প্রদানের মতো কিছু সাধারণ যোগ্যতা গুলি থাকতে হবে।  

 

আমেরিকার ভিসা খরচ 

আমেরিকার ভিসা খরচ ভিসার ধরণ, বয়স, এবং আবেদন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। সাধারণত 

  • পর্যটন/ব্যবসা (B1/B2) ভিসায় ১৬০ ডলার, 
  • শিক্ষার্থী (F1) ভিসায় সব বয়সের জন্য ১৬০ ডলার, 
  • বিশেষ দক্ষ শ্রমিক (H1B) ভিসায় সব বয়সের জন্য ১৯০ ডলার খরচ হয়।  

অতিরিক্ত খরচ হিসেবে কিছু ভিসার জন্য SEVIS ফি (৩৫০ ডলার) এবং কখনো কখনো DS-160 ফর্ম পূরণের জন্য তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নেওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ লাগতে পারে। খরচ মার্কিন ডলারে প্রদান করতে হবে এবং ফি অফেরতযোগ্য, তবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যেতে পারে।

 

আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা

২০২৩ সালের মে মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে।  এই নীতির অধীনে, যারা “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী” তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না।  এই নিষেধাজ্ঞা বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের সদস্য, এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

 

আমাদের কথা | আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ২০২৪

প্রিয় পাঠক, আশা করছি আমাদের আজকের এই লেখা পড়ে স্বপ্নের দেশ আমারিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আপনার ধারনা পরিস্কার হয়েছে। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নিচের প্রশ্ন উত্তর সমূহ দেখতে পারেন। আর আমাদের এই ব্লগে নিয়মিত এই জাতীয় তথ্যমূলক লেখা প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তাই আমাদের ব্লগটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ। 

 

ধারাবাহিক প্রশ্ন উত্তর – FAQ 

 

আমেরিকা টুরিস্ট ভিসা খরচ ২০২৪ 

২০২৪ সালে আমেরিকা ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে কত খরচ হবে তা দুটি মূল ফি: আবেদন ফি এবং SEVIS ফি (যদি প্রযোজ্য হয়) এর উপর নির্ভর করে।  সাধারণ পর্যটক (B1/B2) ভিসার জন্য আবেদন ফি ১৬০ মার্কিন ডলার।  তবে F, M, J, বা Q  প্রকারের ভিসার ক্ষেত্রে, SEVIS ফি নামে অতিরিক্ত ৩৫০ ডলার খরচ লাগে।  

আমেরিকা ভিজিট ভিসা প্রসেসিং 

আমেরিকা ভিজিট ভিসার আবেদনে প্রথমে B1/B2 ভিসার জন্য DS-160 ফর্ম পূরণ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র যেমন পাসপোর্ট, ছবি, আর্থিক প্রমাণ, ভ্রমণের উদ্দেশ্যের প্রমাণ জমা দিতে হবে।  এরপর আবেদন ফি প্রদান করে ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষা করতে হবে।  ইন্টারভিউতে ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা জানানোর পর ভিসা অনুমোদন হলে পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্প দেওয়া হবে।  প্রসেসিং সময় কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। 

আমেরিকা ভিসার  মেয়াদ 

আমেরিকা ভিসার মেয়াদ ভিসার ধরণ ও ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। সাধারণ পর্যটক ভিসা (B1/B2) সর্বোচ্চ ১০ বছরের হতে পারে, কিন্তু প্রতিবার আমেরিকায় থাকা যায় মাত্র ৬ মাস। অন্যান্য ভিসার মেয়াদ কয়েক মাস থেকে ৫+ বছর পর্যন্ত হতে পারে। ভিসার মেয়াদ শেষে অবশ্যই দেশ ছাড়তে হবে।

 

“আরো পড়ুন”

  1. পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সৌদি ভিসা চেক – 2024 
  2. মালয়েশিয়া ভিসা চেক পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে

Leave a Comment